বঙ্গবন্ধুর তিন খুনির অবস্থান এখনো অজানা

0

ঢাকা অফিস: জাতীয় শোক দিবস আজ। স্বাধীনতার মহান স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৫তম শাহাদাতবার্ষিকী আজ। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোররাতে সেনাবাহিনীর কিছুসংখ্যক বিপথগামী সদস্য ধানমণ্ডির বাসভবনে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে। ঘাতকরা শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি, তাদের হাতে একে একে প্রাণ হারিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর বড় ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, মেজ ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল, ছোট ছেলে শেখ রাসেল, পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজি জামাল। পৃথিবীর এই জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড থেকে বাঁচতে পারেননি বঙ্গবন্ধুর একমাত্র ভাই শেখ আবু নাসের, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে যুবনেতা শেখ ফজলুল হক মনি ও তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বেগম আরজু মণি, স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম সংগঠক ও জাতির পিতার ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তাঁর মেয়ে বেবী সেরনিয়াবাত ও ছেলে আরিফ সেরনিয়াবাত, নাতি সুকান্ত আবদুল্লাহ বাবু, ভাইয়ের ছেলে শহীদ সেরনিয়াবাত, আবদুল নঈম খান রিন্টু ও আত্মীয় বেন্টু খান,বঙ্গবন্ধুর প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা কর্নেল জামিল উদ্দিন আহমেদ, সেনা সদস্য সৈয়দ মাহবুবুল হক ও এসবি কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান। এ সময় বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় প্রাণে রক্ষা পান।

পলাতক ৫ আসামি: ইতিহাসের বর্বরোচিত এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে এ পর্যন্ত ছয়জনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রায় কার্যকর করা হয়েছে। এখনো পলাতক রয়েছে পাঁচ আসামি। পলাতক আসামিরা হলো খন্দকার আবদুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম, এ এম রাশেদ চৌধুরী, এস এইচ এম বি নূর চৌধুরী ও মোসলেহ উদ্দিন। তাদের গ্রেপ্তারে ইন্টারপোলের পরোয়ানা রয়েছে। এ ছাড়া মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত আসামি আবদুল আজিজ পাশা জিম্বাবুয়েতে ২০০২ সালে মারা যায় বলে সরকারের কাছে তথ্য রয়েছে। পলাতক আসামিদের অবস্থানের বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধুর পাঁচজন পলাতক খুনির মধ্যে দুজনের অবস্থান আমরা জানি। একজন যুক্তরাষ্ট্রে এবং একজন কানাডায় অবস্থান করছে। তাদের ফেরত আনার জন্য সরকার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অবশিষ্ট তিনজন খুনির অবস্থান আমরা এখনো জানি না। তাদের অনুসন্ধান করার জন্য ইতোমধ্যে বাংলাদেশের সব বৈদেশিক মিশনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’পলাতক পাঁচ আসামির বিষয়ে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধুর খুনি নূর চৌধুরী কানাডায় পলাতক আছে। সে কানাডার সরকারকে বলেছে, বাংলাদেশে একটি মামলায় তাকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়েছে। কানাডার সরকারের একটা আইন আছে, যেটা হচ্ছে, যে দেশে মৃত্যুদণ্ড থাকে, সেখানে মৃত্যুদণ্ড হতে পারে এ রকম কোনো আসামিকে ফেরত পাঠায় না। সেই আবেদনের কারণে খুনি নূর চৌধুরী সেখানে এখন বসবাসরত আছে।’আইনমন্ত্রী বলেন, ‘খুনি নূর চৌধুরী কানাডা সরকারের কাছে কী আবেদন করেছিল, যার কারণে তাকে কানাডায় থাকার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, সেটি জানতে আমরা দেশটির সরকারের কাছে সেই কাগজপত্রগুলো চেয়েছিলাম। কানাডার সরকার জবাব দিয়েছে, তাদের প্রাইভেসি অ্যাক্টে এসব কাগজপত্র দেওয়া যায় না। তখন সেখানে আমরা আইনজীবী নিয়োগ করে আদালতে আবেদন করি। আদালত বলেছেন, এ কাগজপত্রগুলো দেওয়া যাবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা এখন অগ্রসর হচ্ছি।’আনিসুল হক বলেন, ‘অপর খুনি রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় লাভ করেছিল। সে ব্যাপারে যে পরিস্থিতি হয়েছে, সেটা আমরা অবজারভ করছি। তাকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে আমরা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।’আইনমন্ত্রী বলেন, ‘পলাতক বাকি তিন খুনির অবস্থানের বিষয়ে এখনো আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। তাদের অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার ব্যাপারে অনুসন্ধান চলছে।’ পাঁচ পলাতক খুনিকে দেশে ফিরিয়ে এনে রায় সম্পূর্ণভাবে কার্যকর না করা পর্যন্ত সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলে জানান মন্ত্রী।

Share.