ভারতীয় দল থেকে বাদ পড়া উইকেট কীপার ঋদ্ধিমান সাহাকে হোয়াটসঅ্যাপে হুমকি

0

স্পোর্টস রিপোর্ট: সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে ভারতীয় টেস্ট দল থেকে বাদ পড়া উইকেট কীপার ঋদ্ধিমান সাহাকে হোয়াটসঅ্যাপে হুমকি দেওয়া হয়েছে । এক টুইটে ঋদ্ধিমান সাহা জানিয়েছেন, ‘সম্মানিত’ এক সাংবাদিক তাকে যে বার্তা পাঠান, তাতে প্রচ্ছন্ন হুমকি দিয়ে লেখা ছিল, “”তুমি আমাকে কল করোনি। আমি তোমাকে আর ইন্টারভিউ করবো না। আমি অপমান সহজভাবে নিই না। এটা আমি মনে রাখবো।” এই টুইটের পর ঋদ্ধিমান সাহার পাশে দাঁড়িয়েছেন অনেক ক্রিকেটার, আবার কোনও কোনও ক্রিকেট অনুরাগী লিখেছেন, “মনে হয়নি উনি কোনও সাংবাদিক, মনে হয়েছে কোনও ফিক্সার কোনও ক্রিকেটারকে হুমকি দিচ্ছে।” এমনকি সাংবাদিকরাও এই ঘটনার ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন। অস্ট্রেলিয়ান সাংবাদিক ক্লোই অ্যামান্ডা বেইলি লিখেছেন টুইটারে, “ঋদ্ধিমানকে ধন্যবাদ এটা শেয়ার করার জন্য, যারা সাংবাদিকতার আইন ও নীতি নিয়ে পড়েছেন তারা জানেন এটা কোনও সাংবাদিকতা হতে পারে না। এটা গুন্ডামি।” ভারতের সাবেক ক্রিকেটার হরভজন সিং বলেন, “নাম না জানলে অনেক ভালো সাংবাদিকও সন্দেহের আওতায় আসতে পারেন।” ভারতের আরেক সাবেক ক্রিকেটার গৌতম গম্ভীরও লিখেছেন, “যা কিছু সবার সামনে কথা হচ্ছে তা হতাশাজনক, এটা সাক্ষাৎকার চাওয়ার কোনও উপায় হতে পারে না।” বাদ পড়া নিয়ে বিতর্ক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের জন্য ভারতের যে দল ঘোষণা করা হয়েছে, তাতে ঋদ্ধিমান সাহা বাদ পড়ার পর থেকেই এ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। বাদ পড়া খেলোয়াড়দের মধ্যে আরও আছেন আজিঙ্কা রাহানে, চেতেশ্বর পুজারা ও ইশান্ত শর্মা। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের পর কোহলি নেতৃত্ব ছেড়ে দেয়ায় এই সিরিজের জন্য ঘোষিত দলে অধিনায়ক যে পরিবর্তন হবে তা আগেই নির্ধারিত ছিল। ঋদ্ধিমান সাহা বাদ পড়ার পর নিজেই খানিকটা অনুযোগের সুরে ভারতের গণমাধ্যমে দাবি করেছেন তাকে দলে থাকার নিশ্চয়তা দিয়েছিলেন সৌরভ গাঙ্গুলি, যিনি ভারতের ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থা, বিসিসিআইয়ের বর্তমান সভাপতি। এখন প্রশ্ন উঠেছে একজন বোর্ড সভাপতি এই ধরণের নিশ্চয়তা দিতে পারেন কি না। এনিয়ে ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গল- সিএবির সচিব স্নেহাশিস গাঙ্গুলি বলেছেন, “এটা (সাহার বাদ পড়া) পুরোপুরি ভারতের ক্রিকেট টিম ম্যানেজমেন্টের বিষয়, বোর্ড, কোচ ও নির্বাচকরা বলার পর সিএবির তো এটা নিয়ে কোনও বক্তব্য থাকতে পারে না।” যদিও সৌরভ গাঙ্গুলির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনও বক্তব্যই আসেনি। ভারতের হয়ে ৪০টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন ঋদ্ধিমান সাহা। বাংলার ক্রিকেট সমর্থকদের একটা অংশ একজন বাঙালী ক্রিকেটারের বাদ পড়া মেনেই নিতে পারছেন না। এই মেনে না নেয়াতে আগুন ঢেলেছেন ঋদ্ধিমান সাহা নিজেই, তিনি একটি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “রাহুল দ্রাবিড় বলেছেন, আমাকে অবসর নিতে, কিন্তু এটা তো আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার।” এরপর ঋদ্ধিমান সাহা দাবি করেন সৌরভ গাঙ্গুলি তাকে জানিয়েছেন, “যতদিন আমি আছি, তোকে কিছু ভাবতে হবে না।” তিনি বলেন, “একটা সিরিজে কী এমন পরিবর্তন হলো? আমার বয়স বেড়ে গেল? কী এমন হলো।” পশ্চিমবঙ্গের গণমাধ্যমে ঋদ্ধিমান সাহা বলেছেন তিনি ঘরোয়া ক্রিকেট চালিয়ে যাবেন কিন্তু এবার ব্যক্তিগত কারণে রঞ্জি ট্রফিতে খেলবেন না। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের দল গুজরাট টাইটান্সের হয়ে খেলবেন মি. সাহা। গতকাল ভারত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি টোয়েন্টি সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে জয়ের পর ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে কোচ রাহুল দ্রাবিড় বলেন, “ঋদ্ধিমানের মন্তব্যে আমি মোটেও কষ্ট পাইনি। তার ক্যারিয়ার ও প্রাপ্তিকে সম্মান জানাই। আমি সন্তুষ্ট যে আমি তাকে এটা (অবসর নেয়ার বিষয়) সরাসরি বলতে পেরেছি, আমি চাইনি এটা মিডিয়ার মাধ্যমে সে জানুক।” রাহুল দ্রাবিড় বলেছেন, “এই বছর আমাদের হাতে মাত্র তিনটি টেস্ট ম্যাচ আছে। রিশাভ পান্ত ইতোমধ্যে নিজেকে এক নম্বর পছন্দ হিসেবে প্রমাণ করেছে।” কোচের ব্যাখ্যায় অনেক প্রশ্নের উত্তর মিললেও আলোচনা চলছে ৩৭ বছর বয়সী ঋদ্ধিমান সাহা কেন এমন প্রতিক্রিয়া দেখালেন। ভারতের অনেক ক্রিকেটারের জীবনী নিয়ে বই লেখা ভিজেয় লোকাপালি প্রশ্ন তুলেছেন, “শুধু সাহার বিষয়ে সচ্ছতা দেখালো বোর্ড। আমরা আজিঙ্কা, চেতেশ্বর ও ইশান্তের বিষয়েও জানতে চাই, তারা কি পরিকল্পনায় আছেন।” ইএসপিএন ক্রিকিনফোর ক্রিকেট বিশ্লেষণে সিদ্ধার্থ মঙ্গা লিখেছেন, “আমরা যারা বাইরে থেকে ক্রিকেটটা দেখি তাদের কাছে দল থেকে বাদ দেয়াটা যৌক্তিক মনে হতেই পারে, কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে একজন ক্রিকেটারের জীবনটাও সহজ নয়, ফিটনেস ধরে রাখতে, নিজেকে প্রমাণ করতে সে দিনে-রাতে পরিশ্রম করছে, সেই অবস্থায় বাদ পড়াটা একটা ধাক্কাই বটে।

Share.