ভারতের চলমান সংকটে ক্ষুদ্রঋণই সমাধান: ড. মুহাম্মদ ইউনূস

0

ডেস্ক রিপোর্ট: ভারতে শ্রম অভিবাসন সমস্যা সমাধানের পথ বাতলে দিলেন বাংলাদেশি নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। কোভিড-১৯ মহামারি শুরু হওয়ার পর পরিযায়ী শ্রমিকদের যে অসহায় চিত্র দেখা গেছে দেশটিতে, তা পাল্টাতে ঋণ ব্যবস্থা সংস্কারের ওপর জোর দিয়েছেন তিনি। ভারতীয় ক্ষুদ্রঋণ সংস্থাগুলোর সংগঠন সা-ধনের ওয়েবিনারে শনিবার এসব কথা বলেন ইউনূস। এ খবর দিয়েছে ভারতের অনলাইন বিজনেস টুডে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, করোনা দেখিয়ে দিচ্ছে গ্রাহকের ঋণের টাকা ফেরতের চাপ না দিয়ে তার পাশে দাঁড়ালেই সমাধান পাওয়া যাবে। মহামারি শেষে ক্ষুদ্রঋণ শিল্পের আমূল পরিবর্তনের কথা বলেন তিনি। গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা বলেন, পরিবর্তন এলে পালটে যাবে ভারতের শ্রম অভিবাসনের চিত্রও। লকডাউনের পর বাড়ি ফিরতে বিভিন্ন রাজ্যের শ্রমিকের ঢল কেনো দেখা দিলো? তাদের কেনো কাজ খুঁজতে বাড়ি ছাড়তে হয়েছিল প্রশ্ন তোলেন ইউনূস। বলেন, ভিন্ন রাজ্যে কাজ করেই কেনো পরিবারের পেট চালাতে হবে! সহজ শর্তে অল্প টাকা ঋণ পেলেও তারা নিজ গ্রামেই নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে পারে।তিনি মনে করেন, এবার যেভাবে জীবন ঝুঁকিতে ফেলে ও সম্মান খুইয়ে পরিযায়ী শ্রমিকদের যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, তাদের অনেকেই আর দূর রাজ্যে কাজে যেতে চাইবে না। এসব মানুষদের টার্গেট করেই ক্ষুদ্রঋণকে এগিয়ে নিতে হবে ভারতে। বক্তব্যে বাংলাদেশে আশির দশকের বন্যার কথা তুলে ধরেন ইউনূস। তিনি জানান, ওই বন্যায় বাংলাদেশের অনেক মানুষ তার সর্বস্ব হারিয়েছিলেন। তখন তাদের ঋণ ফেরত দিতে পারেননি অনেকেই। কিন্তু সেসময় তাদের ওপর ঋণ ফেরতের চাপ না দিয়ে উলটো পাশে দাঁড়ান তিনি ও তার প্রতিষ্ঠান। এতে দ্রুত সংকট কেটে যায় এবং তারা তাদের অর্থ ফেরত পান। তাই ভারতের করোনাকালীন এ সময় গেলেও একই ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেন তিনি। এ সময় হিসেব না কষে শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ানো উচিৎ। গ্রাম অর্থনীতি শক্তিশালী করার ওপরও জোর দিয়েছেন এই অর্থনীতিবিদ। বলেন, ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমেই গ্রাম অর্থনীতি শক্তিশালী করতে হবে। কোভিড-১৯ সংকট ভারতকে এ সুযোগ করে দিয়েছে। এখনি সময় ভারতের গ্রাম অর্থনীতি শক্তিশালী করার। একটি স্বাধীন গ্রাম অর্থনীতি নিশ্চিত করতে পারলেই শ্রম অভিবাসন বন্ধ হয়ে যাবে। একইসঙ্গে, কয়েক বছরের মাথায়ই গ্রাম থেকে শহরে নয় উলটো শহর থেকে গ্রামে ফিরে আসার হার বৃদ্ধি পাবে। তিনি দুর্যোগকালীন তহবিল গঠনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন তার বক্তব্যে। ইউনূস বলেন, করোনার মতো দুর্যোগ মোকাবেলায় জাতীয় দুর্যোগকালীন তহবিল গঠন করতে হবে। এটি গঠন করতে হবে ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোর অধীনে এবং এটি নিয়ন্ত্রণও করবে তারাই। তাদের মনে রাখতে হবে, ক্ষুদ্রঋণ নিজের অর্থ আয়ের হাতিয়ার নয়, এটি মানুষকে সাহায্য করার জন্য।

Share.