রাসেল-শামীমাকে আদালতে তোলা হচ্ছে আজ

0

ঢাকা অফিস: ই-কমার্সের নামে লাখো গ্রাহকের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে কয়েক হাজার কোটি টাকা। আকর্ষণীয় অফার, অল্প পুঁজিতে অধিক লাভের প্রলোভন বা ধর্মের দোহাই দিয়ে হাতিয়ে নেওয়া হয় এসব অর্থ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ইতোমধ্যেই ইভ্যালি, এহসান গ্রুপ ও ই-অরেঞ্জের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের অনেকেই গা-ঢাকা দিয়েছেন। নজরদারিতে আছে আরও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের অন্তত এক ডজন কর্ণধার ও সহযোগী। চলছে পুলিশ-র‌্যাবসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থার বহুমুখী তদন্ত। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে তাদেরও যেকোনো সময় গ্রেফতার করা হতে পারে। এদিকে তিন দিনের রিমান্ড শেষে ইভ্যালির সিইও মো. রাসেল ও চেয়ারম্যান (তার স্ত্রী) শামীমা নাসরিনকে আজ আদালতে তোলা হবে। গত বৃহস্পতিবার মোহাম্মদপুরের বাসায় অভিযান চালিয়ে প্রতারণার অভিযোগে রাসেল ও তার স্ত্রী শামীমাকে গুলশান থানায় মামলায় গ্রেফতার করে র‌্যাব।আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্র বলছে, ই-কমার্সের নামে গ্রাহকের হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাটের ঘটনা অনুসন্ধান চলছে। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকেও বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রতারিত গ্রাহকদের অনেকেই আগে মামলা করতে না চাইলেও এখন অনেকেই এগিয়ে আসছেন। প্রতারণার বিষয়গুলো তুলে ধরছেন। ফলে তাদের জন্য কাজ করা সহজ হচ্ছে। যেসব প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের থেকেও জানা গেছে অর্থ আত্মসাতের গুরুত্বপূর্ণ সব কৌশল ও তথ্য। পুরনো গ্রাহকদের অর্থ ফিরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি নতুন করে যাতে কেউ প্রতারণার শিকার না হন, সেদিকেও লক্ষ রাখা হচ্ছে। নজরদারিতে আছে ধামাকা, বুমবুম, সিরাজগঞ্জশপ, আলাদিনের প্রদীপ, কিউকম, আদিয়ান মার্ট, নেটডটকম ও আলিশা মার্টসহ বেশ একাধিক ই-কমার্স সাইট।জানতে চাইলে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অর্গানাইজড ক্রাইমের বিশেষ পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবির যুগান্তরকে বলেন, সিআইডি উদ্যোগী হয়েই ধামাকা ও এসপিসি ওয়ার্ল্ড এক্সপ্রেস লিমিটেডের নামে দুটি মামলা করছে। আরও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে তদন্ত চলছে। তাদের বিরুদ্ধেও মামলা হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যে প্রতিষ্ঠানগুলোর কথা বলেছে তাদের বিষয়েও তথ্য নিচ্ছি। এসপিসি ওয়ার্ল্ডের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে এক কোটি ১৭ লাখ টাকার মামলা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে মানি লন্ডারিংয়ের এ তথ্য পাওয়া গেলেও টাকার পরিমাণ বাড়তে পারে। আর ধামাকার লেনদেন হয়েছে ৮০৩ কোটি টাকা। লন্ডারিংয়ের অর্থ পেয়েছি ১১৬ কোটি টাকা।সিআইডির এই বিশেষ পুলিশ সুপার বলেন, সাধারণত এই ধরনের প্রতারণা বা অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় ভুক্তভোগীরা মামলা করতে চায় না। ভুক্তভোগীরা এগিয়ে এলে আমাদের জন্যও তদন্ত সহজ হয়। এই ধরনের প্রতারণা বন্ধে সচেতনতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন এই পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, লোভে পড়ে তারা এটি করছে। এরাই আগে করেছে এমএলএম কোম্পানি। মানি লন্ডারিংয়ের পর্যাপ্ত তথ্য নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।এদিকে ইভ্যালির বিরুদ্ধে করা রাজধানীর গুলশান থানার মামলায় তিন দিনের রিমান্ড শেষে আজ মঙ্গলবার সকালে প্রতিষ্ঠানের সিইও রাসেল ও চেয়ারম্যান শামীমাকে আদালতে তোলা হবে। সূত্র বলছে, রিমান্ডে রাসেল দাবি করেছেন-তিনি মুক্তি পেলেই পাওনা টাকা গ্রাহককে ফিরিয়ে দিতে পারবেন। গ্রাহকই এই অর্থ দেবে। ই-কমার্স ব্যবসার এটি একটি প্রচলিত বিষয়। এটা কোনো প্রতারণা নয়। এটা অর্থ আত্মসাৎও নয়। এখানে গ্রাহকের টাকা বিক্রেতাকে দেওয়া হয়। বিক্রেতা তা দিয়ে পণ্য দেন। রিমান্ডের শুরুর দিকে রাসেল কিছুটা অসুস্থ বোধ করছিলেন। তবে তার মধ্যে সেভাবে অনুশোচনা ছিল না।জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ওহিদুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, রিমান্ডে ইভ্যালি ও তার কার্যক্রমের নানা দিক নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। রিমান্ডের শেষ দিনেও রাসেল দম্পতিকে এক টেবিলে মুখোমুখি করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তার অ্যাকাউন্টে ৩০ লাখ টাকা রয়েছে বলে জানা গেছে।

 

Share.