ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে মানুষ নিঃস্ব হওয়ার পর: হাইকোর্ট

0

ঢাকা অফিস: দেশের ক্ষুদ্রঋণসহ বিভিন্ন খাতে প্রতারণা করা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নিলেও তা দেরিতে নেওয়া হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, সরকার তখনই পদক্ষেপ নিল, যখন আমি নিঃস্ব হয়ে গেলাম। এ সময় ই-কমার্স প্রসঙ্গেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন হাইকোর্ট। অনিবন্ধিত সুদের ব্যবসা বন্ধ চেয়ে করা রিটের শুনানিতে সোমবার বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি জাকির হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নুর উস সাদিক চৌধুরী। শুনানিতে বিদেশে টাকা পাচারের বিষয়ে হাইকোর্ট বলেন, ‘আমার বাড়ি কেন অরক্ষিত? আমার বাড়ি মানে বাংলাদেশ। দেশের মানুষ দরজা-জানালা বন্ধ করে শান্তিতে ঘুমাবে। কিন্তু আমার ঘর কেন অরক্ষিত? আমাদের দরজাগুলো কেন খোলা? মানুষের টাকা কেন লুট করে নিয়ে যাচ্ছে দেশের বাইরে? এগুলো বন্ধ করা কাদের দায়িত্ব? এটা আমরা দেখতে চাই। আমরা এটা পরীক্ষা করতে চাই। আমরা এ বিষয়ে দেখেশুনে আদেশ দেব।’এ সময় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নুর উস সাদিক চৌধুরী বলেন, সরকার যে ব্যবস্থা নিচ্ছে না, তা কিন্তু নয়। এহসান গ্রুপের মালিককে গ্রেফতার করা হয়েছে, ইভ্যালির কর্তাব্যক্তিদেরও গ্রেফতার করা হয়েছে।’তখন হাইকোর্ট বলেন, ‘সরকার তো ব্যবস্থা নিচ্ছে। কিন্তু সেটা কখন? যখন আমি নিঃস্ব হয়ে গেলাম। আমার রেমিডিটা কোথায়? আমার টাকাটা নিয়ে গেল। আমি দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। সে থানায় যাবে, জেলে যাবে যাক। কিন্তু আমার টাকাটা যে নিয়ে গেল, সেটা কোথায়? আমরা মামলা করার পর চোর ধরা পড়ছে। চুরি তো ঠেকানো যাচ্ছে না।’ আদালত প্রশ্ন রেখে বলেন, সরকারের কাজ কী-এ দেশের মানুষের মৌলিক অধিকার, আইনের শাসন সবকিছু সুপ্রতিষ্ঠিত করা।এরপর আদালত এই মামলার আদেশের জন্য ২৭ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেন। এর আগে গত ৭ সেপ্টেম্বর সারা দেশের গ্রামপর্যায়ে ছড়িয়ে পড়া অনিবন্ধিত সুদের ব্যবসা বন্ধ চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়। রিটে ৬৪ জেলার ডিসি-এসপিকে বিবাদী করা হয়েছে। সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন জনস্বার্থে এ রিট করেন।ব্যারিস্টার সুমন সাংবাদিকদের বলেন, দেশের প্রত্যেকটি এলাকায়, প্রতিটি গ্রামে সমবায় সমিতির নামে সুদের ব্যবসা চলছে। আবার অনেকে ব্যক্তিগতভাবে ঋণ দেওয়ার নামে উচ্চ হারে সুদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। কোনো নিবন্ধন নেই তাদের। সাধারণ মানুষ এসব সুদের কারবারির কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। তাদের সাপ্তাহিক ও মাসিক ভিত্তিতে আদায় করা সুদের পরিমাণও আকাশছোঁয়া। ১০ হাজার টাকায় প্রতি সপ্তাহের সুদ ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, কোনো ক্ষেত্রে ১ হাজার টাকা। মাসে সুদ হিসাবে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করেন তারা। অনেক পরিবার অনিবন্ধিতভাবে গজিয়ে ওঠা এসব সমবায় সমিতি ও সুদকারবারি থেকে ঋণ নিয়ে সুদের বোঝা টানতে টানতে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনের চোখের সামনে তারা সুদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। তাই সারা দেশের অনিবন্ধিত সুদের সব ধরনের ব্যবসা বন্ধ করার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেছি।ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নুর উস সাদিক চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আদালতে ভুক্তভোগীরা মামলা করতে পারেন। এ নিয়ে রিট করার কোনো যৌক্তিকতা নেই।

Share.