লন্ডন ব্রিজে হামলাকারী আগেও সাজা খেটেছেন সন্ত্রাসের দায়ে

0

বিশেষ প্রতিনিধি: লন্ডন ব্রিজে ছুরি হামলা চালানো যুবক এর আগেও সন্ত্রাসবাদ সংক্রান্ত অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে কয়েক বছর কারাগারে ছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। ২৮ বছর বয়সী উসমান খান গত বছরের ডিসেম্বরে অনুমতিসাপেক্ষে জেল থেকে ছাড়া পান বলে জানা যায়।  দণ্ড শেষ হওয়ার আগে অনুমতিসাপেক্ষে ছাড়া পেলেও অপরাধীকে সাধারণত কর্তৃপক্ষের নজরদারির মধ্যেই থাকতে হয়। হাতে সার্বক্ষণিকভাবে একটি ইলেকট্রনিক ট্যাগ পরে থাকার শর্তে উসমানকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল বলেও জানা জায়। মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার নেইল বসু জানান, সন্ত্রাসবাদ সংক্রান্ত অপরাধে ২০১২ সালে দণ্ডিত উসমান তাদের কাছে আগে থেকেই পরিচিত। “তিনি ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে অনুমতিসাপেক্ষে জেল থেকে ছাড়া পেয়েছিলেন; এর মধ্যেই তিনি কীভাবে এ হামলা চালালেন, স্পষ্টতই আমাদের তদন্তের অন্যতম প্রধান বিষয় থাকবে এটি,” বলেছেন তিনি। শুক্রবারের হামলায় দুইজন নিহত ও আরও তিনজন আহত হয়েছে বলে পুলিশ নিশ্চিত করেছে। ঘটনাস্থলেই পুলিশের গুলিতে নিহত উসমান ভুয়া একটি বিস্ফোরক ডিভাইস পরে ছিলেন বলেও জানিয়েছে তারা। পুলিশ আসার আগে ঘটনাস্থলে উপস্থিত পথচারী ও সাধারণ জনগণই হামলাকারীকে আটকানোর চেষ্টা করেছিল। শুক্রবারের এ ছুরি হামলাকে পুলিশ ‘সন্ত্রাসী ঘটনা’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। লন্ডনের মেয়র সাদিক খান, পুলিশ কমিশনার ক্রেসিডা ডিকের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ও বিরোধীদলীয় নেতা জেরেমি করবিনও হামলা প্রতিহতে সাধারণ মানুষের বীরত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। টোরি ও লেবার পার্টি ছুরি হামলার ঘটনায় শুক্রবার রাতের নির্বাচনী প্রচারণাও বাতিল করেছে। গত নভেম্বরে যুক্তরাজ্য সন্ত্রাসী হামলার হুমকির মাত্রা কমানোর পর এই হামলা হল। ২০১৭ সালের জুনে তিন জঙ্গি লন্ডন ব্রিজে ভিড়ের মধ্যে ভ্যান তুলে দিয়ে ও ছুরি মেরে আটজনকে হত্যা করেছিল। পুলিশ জানিয়েছে তারা উসমানের স্ট্যাফোর্ডশায়ারের ঠিকানায় তল্লাশি চালাচ্ছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শুক্রবার দুপুর ১টা ৫৮ মিনিটের দিকে লন্ডন ব্রিজের উত্তরপ্রান্তের ফিশমঙ্গারস হল থেকেই হামলার সূত্রপাত হয়। সেসময় ওই হলে কারাবন্দিদের পুনর্বাসন নিয়ে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘লার্নিং টুগেদার’ নামের সম্মেলনটি চলছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও সাবেক কারাবন্দিদের ওই মিলনমেলায় উসমানও ছিলেন। ২৮ বছর বয়সী এ যুবক লন্ডন ব্রিজের আগে হলটির ভেতরে থাকা লোকজনের উপরও হামলা চালিয়েছিলেন বলে ধারণা করছে পুলিশ। ঘটনার সময় ওই এলাকায় থাকা বিবিসির সাংবাদিক জন ম্যাকমানাস জানান, তিনি ব্রিজের ওপর ধস্তাধস্তি দেখতে পান। “কয়েকজন মানুষ একজনকে আটকাচ্ছিল। দ্রুত পুলিশ সেখানে চলে এসে ওই ব্যক্তির দিকে কয়েকটি গুলি ছোড়ে,” বলেছেন তিনি। সোশাল মিডিয়ায় আসা ফুটেজে মাটিতে শুয়ে থাকা এক ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে পুলিশকে গুলি করতে দেখা গেছে। স্যুট ও জ্যাকেট পরা আরেকজনকে ওই ব্যক্তির কাছ থেকে একটি ছুরি উদ্ধার করে দৌড়ে পালাতেও দেখা যায়। আরেকটি ভিডিওতে লন্ডন ব্রিজে পুলিশকে একটি সাদা লরির দিকে বন্দুক তাক করে থাকতেও দেখা গেছে। ঘটনার পর মেট্রোপলিটন পুলিশ ব্রিজের আশপাশের এলাকায় টহল বাড়িয়েছে। ঘটনাস্থল এখনও ঘিরে রাখা হয়েছে। জনসাধারণকে ওই এলাকা এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেয়ার পাশাপাশি তারা হামলার ঘটনায় কেউ কোনো তথ্য জানলে তাদেরকে তদন্তে সহায়তা করারও অনুরোধ জানিয়েছে।

Share.