শিশুদের উন্নত ভবিষ্যৎ দিতে সরকার নিরলসভাবে কাজ করছে : প্রধানমন্ত্রী

0

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শিশুদের উন্নত ভবিষ্যৎ উপহার দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে, যাতে তারা দেশের কর্ণধার হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিটি শিশু যথাযথ শিক্ষার মাধ্যমে আগামী দিনে দেশের কর্ণধার হবে, তারা সুন্দর জীবন কাটাবে, আমরা এ লক্ষ্য নিয়েই কাজ করছি।’ প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট ছেলে শহীদ শেখ রাসেলের ৫৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ভার্চুয়ালি এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদানকালে এ কথা বলেন। শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) এ কর্মসূচির আয়োজন করে। নভেল করোনাভাইরাসজনিত পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও বাড়িতে নিয়মিত পড়াশোনা করে শিক্ষার্থীদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠার তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী আজ রোববার শেখ রাসেলের ৫৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ম্যুরাল উম্মোচনসহ বিভিন্ন কর্মসূচির উদ্বোধন  করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সময় শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘তোমরা আদর্শ সুনাগরিক হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলবে। করোনাভাইরাসের মাঝেও ঘরে বসে পড়ালেখা চালিয়ে যাবে। দেশের সেবায় নিজেদের উপযোগী করে গড়ে তুলবে। এটাই তোমাদের কাছে আমাদের চাওয়া।’ এ ছাড়া শেখ রাসেলের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাধীনতার পর রাসেল সব সময় বাবার সামনে ছায়ার মতো ঘুরে বেড়াত। রাসেল সব সময় সেনাবাহিনীর একজন সদস্য হওয়ার স্বপ্ন মনে লালন করত।’ রাসেলের জীবনের স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাধীনতার আগে রাসেল যখন ছোট, ওই সময় আব্বাকে আমরা সবাই জেলখানায় দেখতে যেতাম। সঙ্গে রাসেলও আমাদের সঙ্গে যেত। ওই দিন রাতে রাসেল ঘুমাতে পারত না। সারা রাত সে কষ্টে ছটফট করত, কান্নাকাটি করত। তখন কামাল, জামাল, রেহানাসহ আমরা তাকে সান্ত্বনা দিতাম। স্বাধীনতার পর সে মাত্র সাড়ে তিন বছর বাবাকে কাছে পেয়েছে। তারপর ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সব শেষ।’ রাসেলের ভবিষ্যৎ স্বপ্নের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাসেল ছোটবেলা থেকে সব সময় সেনাবাহিনীর একজন সদস্য হওয়ার স্বপ্ন দেখত। সে যখন আমাদের সঙ্গে গ্রামে যেত, তখন গ্রামের ছেলেদের একত্রে জড়ো করে প্যারেড করাত। প্যারেড করিয়ে সে ছেলেদের খালি হাতে যেতে দিতে না। সবাইকে কিছু না কিছু দিত। টুঙ্গিপাড়া থেকে শার্ট ও জামাকাপড় এনে বিতরণ করত গ্রামের শিশু-কিশোরদের মধ্যে। তাদের মধ্যে খাবারদাবারও বিতরণ করত সে। রাসেলের মনটা ছিল বেশ উদার। বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবরেটরি স্কুল কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। আপনারা আমার ছোট ভাই রাসেলকে স্মরণ করে একটি ম্যুরাল তৈরি করেছেন তার স্মৃতি ধরে রাখার জন্য। আপনাদের এ উদ্যোগের জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। আপনাদের এ উদ্যোগের ফলে ল্যাবরেটরি স্কুলের ছোট ছোট শিক্ষার্থী জানতে পারবে রাসেল এ স্কুলেরই একজন শিক্ষার্থী ছিল। ঘাতকেরা একটি ছোট শিশুকেও বাঁচতে দেয়নি। এখন শিক্ষার্থীরা রাসেলের স্মৃতিকে ধরে রাখবে বলে আমি আশা করছি।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শেখ রাসেল শিশু-কিশোর পরিষদ ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়। যাতে দেশের শিশুরা সুনাগরিক হয়ে গড়ে ওঠে, এটাই ছিল আমাদের মূল লক্ষ্য। দেশব্যাপী এ সংগঠন কাজ করে চলেছে। প্রতিবছর এ সংগঠন আজকের দিনে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে থাকে। এতে করে শিশুদের মাঝের সুপ্তপ্রতিভা বিকশিত হয়।’প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘আজ ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন হয়েছে বলেই আমি এ করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানগুলোতে অংশ নিতে পেরেছি। অনুষ্ঠানগুলোতে সরাসরি অংশ নিতে না পারলেও ডিজিটাল পদ্ধতিতে সবার সামনে কথা বলতে পারছি। আসলে করোনা পরিস্থিতির কারণেই আমার বাইরে যেতে বাধা রয়েছে। ফলে গণভবনে থেকেই আমাকে রাষ্ট্রীয় সব কাজ করতে হচ্ছে। আমার কাছে খুবই খারাপ লাগছে—আমি এবার সরাসরি ছোট্ট সোনামণিদের আজকের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারলাম না। এটা আমার জন্য দুঃখের।’ তবে ভবিষ্যতে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবারও সবার সঙ্গে দেখা হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী।

Share.