সংঘর্ষ নয়, পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ কিশোরদের

0

ঢাকা অফিস: যশোর পুলেরহাট শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে সংঘর্ষে নয়, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মারধরে তিন কিশোরের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। আর অভিযোগটিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে পুলিশ বলছে, এখানে দুপক্ষীয়ভাবে কিছু ঘটেনি। একপক্ষীয় হয়েছে বলে তারা মনে করছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে তিন কিশোর নিহত হয় বলে জানিয়েছিল পুলিশ। প্রথমে উন্নয়ন কেন্দ্রের কর্তৃপক্ষের বরাতে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, কিশোরদের দুপক্ষের সংঘর্ষে এই হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। ওই ঘটনায় আহত হয় অন্তত ১৭ জন। তাদের যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে ঘটনা সম্পর্কে জানতে আহতদের জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, কোনো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেধড়ক মারপিটে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে বলে কিশোরদের অভিযোগ। কিশোররা জানায়, কদিন আগে এক গার্ডের চুল কেটে না দেয়ায় তিনি (গার্ড) গালিগালাজ করেন। এতে কয়েক কিশোর তাকে মারধর করে। এ ঘটনার জেরে গতকাল অফিসে নিয়ে শালিসের এক পর্যায়ে কিশোরদের বেধড়ক মারধর করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এতে ওই হতাহতের ঘটনা ঘটে।যশোর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বন্দি চুয়াডাঙ্গার এক কিশোর বলে, “গত ৩ আগস্ট কেন্দ্রের হেড গার্ড (আনসার সদস্য) নূর ইসলাম তার চুল কেটে দিতে বলেন। সেদিন আমি কেন্দ্রের প্রায় দু’শজনের চুল কেটে দেয়ায় হাত ব্যথা ছিল। সে কারণে তার চুল পরে কেটে দেব বলে জানালে তিনি ক্ষিপ্ত হন। গালিগালাজ করতে থাকেন। তখন এক পর্যায়ে কয়েকজন কিশোর ওই গার্ডকে মারধর করে।‘ওই গার্ড অফিসে নালিশ করেন যে, কিশোররা মাদক সেবন করে তাকে মারধর করেছে। কিন্তু কিশোররা কর্তৃপক্ষকে জানায়, তারা মাদক সেবন করেনি। ওই ঘটনার পর বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার দিকে আমাদের অফিসে ডাকা হয়। এসব বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। আমরা ঘটনা জানানোর একপর্যায়ে কেন্দ্রের সহকারী তত্ত্বাবধায়ক মাসুম বিল্লাহ, প্রবেশন অফিসার মুশফিকসহ অন্য স্যাররা আমাদের মারধর করেন।’ যশোরের বসুন্দিয়া এলাকার আরেক কিশোর বন্দি বলে, ‘নিহত রাসেল আর আমি একই রুমে থাকতাম। আগামী মাসেই রাসেলের জামিন পাওয়ার কথা ছিল। এই কিশোরের অভিযোগ, ‘স্যারদের বেদম মারপিট আর চিকিৎসা না পেয়ে রাসেল মারা গেছে। প্রবেশন অফিসার মারধরের সময় বলছিলেন, ‘তোদের বেশি বাড় বেড়েছে। জেল পলাতক হিসেবে তোদের বিরুদ্ধে মামলা করে ক্রসফায়ারে দেয়া হবে।’ তার অভিযোগ, মারধর করে বন্দি কিশোরদের কেন্দ্রের খোলা চত্বরে এখানে-সেখানে ফেলে রাখা হয়। পরে একজন করে মারা গেলে তাদের হাসপাতালে পাঠানো হয়। এরপর রাত ৮টা থেকে ১১টার মধ্যে চার দফায় আহতদের হাসপাতালে আনা হয়। এ ব্যাপারে খুলনা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি একেএম নাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে মর্মান্তিক ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। আমরা যারা অপরাধ নিয়ে কাজ করি, তারা ঘটনার প্রায় ছয় ঘণ্টা পরে বিষয়টি অবহিত হয়েছি। যে কারণে মূল ঘটনা জানা জটিল ও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।’ ‘এখন যারা আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, তারাই এই ঘটনার মূল সাক্ষী। মৃত্যুপথযাত্রী কেউ মিথ্যা কথা বলে না। তাদের কথার সত্যতা ও যৌক্তিকতা রয়েছে। আমাদের অনুসন্ধানে তাদের বিষয় গুরুত্ব পাবে। সবশেষ আমি বলতে চাই, এ ঘটনা একপক্ষীয়।’তবে প্রবেশন অফিসার মুশফিক আহমেদ এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তার দাবি, ‘সম্প্রতি কেন্দ্রে বন্দি কিশোরদের দুই গ্রুপের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। এরই জেরে বৃহস্পতিবার বিকালে তারা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। রড ও লাঠির আঘাতে মারাত্মক জখম হয় ১৪ কিশোর। প্রাথমিকভাবে কেন্দ্রেই তাদের চিকিৎসা দেয়ার চেষ্টা চলে। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় আশঙ্কাজনক অবস্থায় একে একে আহতদের উদ্ধার করে যশোর সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। এর মধ্যে নাইম, পারভেজ ও রাসেলকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।’ শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি থানায়। এদিকে এই ঘটনায় সমাজসেবা অধিদপ্তর দুই সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তিন কর্মদিবসের মধ্যে এ কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছেন। শুক্রবার সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শেখ রফিকুল ইসলাম এ তথ্য জানান। কমিটির সদস্যরা হলেন যুগ্ম সচিব, সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রতিষ্ঠান) সৈয়দ মো নুরুল বসির ও উপপরিচালক (প্রতিষ্ঠান- ২) এসএম মাহমুদুল্লাহ। সংঘর্ষের ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য কেন্দ্রের দশজনকে পুলিশ অফিসে নেয়া হয়েছে। যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ) তৌহিদুল ইসলাম জানান, কেন্দ্রের দশ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও আনসার সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য পুলিশ অফিসে আনা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পরবর্তী কার্যক্রম নির্ধারণ করা হবে।তবে এখনো কাউকে আটক দেখানো হয়নি। জিজ্ঞাসাবাদ শেষ করার আগে তাদের নাম-ঠিকানা প্রকাশ করতে চাননি এই পুলিশ কর্মকর্তা। এদিকে নিহত তিন বন্দির লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে৷ স্বজনরা হাসপাতালে এসেছেন লাশ নিয়ে যেতে।

Share.