ঢাকা অফিস: নারীর অসহায়ত্ব দূর করে দিতে হবে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেছেন, আমার বাপের বাড়ি আমার বাড়ি, আমার শ্বশুর বাড়িও আমার বাড়ি। আমি যেখানে থাকবো সেটি আমার বাড়ি। এ পৃথিবী আমার বাড়ি কারণ আমি এ পৃথিবীর সন্তান। আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) আয়োজনে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, নারীর যে অসহায়ত্ব, একটা দুঃসহ সম্পর্কের মধ্যে অধিকাংশ সময় নারী আটকে থাকে কারণ তার যাওয়ার জায়গা নেই। তার সমাজ তাকে শিখিয়েছে যেখানে যে সংসারে সে জন্ম নিয়েছে, সেটা তার বাপের বাড়ি। বিয়ের পর সে যেখানে যাচ্ছে, সেটা তার শ্বশুর বাড়ি। তার নিজের বাড়ি বলে কোনো কিছু নেই। তিনি বলেন, আমরা বছরে একটি দিন নারী দিবস পালন করি সেটা অন্য সব দিবস পালন করার মতোই যে, এই বিষয়টা নিয়ে একটা সচেতনতা তৈরি করা। আমি বিশ্বাস করি প্রত্যেকটি দিন নারী দিবস। প্রত্যেকটা দিন নারীর জন্য। কারণ বিশ্বটাই একেবারেই অচল হয়ে যেত মানব সমাজ একবার তৈরি হওয়ার পরে আর দ্বিতীয়বার এগিয়ে যাবার কোনো সুযোগ থাকতো না নারী না থাকলে। প্রকৃতি সবচেয়ে কঠিন ও জরুরি কাজটি নারীকে দিয়েছে সন্তান ধারণ বা গর্ভ ধারণ, সন্তান লালন-পালনের। তিনি আরও বলেন, আজকে এই একুশ শতকে এসে আমি দায়িত্বশীল কিনা, আমি যোগ্য কিনা- এই প্রশ্নের উত্তর আমাকে, নারীকে প্রতিনিয়ত দিতে হয়। আমি যে পর্যায়েই থাকি না কেন। কিন্তু মানব জাতি সৃষ্টির শুরুতেই এ প্রশ্নের উত্তর স্রষ্টা নিজেই করে দিয়েছেন যে নারী সব চাইতে দায়িত্বশীল, সেজন্য সব চাইতে দায়িত্বশীল কাজটি নারীকে দিয়েছেন। রান্না করবে কে নারী, সেলাই করবে কে নারী, ঘর ঝাড়ামোছা করবে কে নারী; এগুলো তো সব নারীর কাজ। কিন্তু এর সঙ্গে যখন অর্থ প্রাপ্তিযোগ যুক্ত হয়ে যায় তখনি বাবুর্চি পুরুষ, দর্জি পুরুষ। কারণ তখন এই কাজগুলোর সঙ্গে একটা আর্থিক সংশ্লেষ এসে যায়। যে কাজটা অর্থ সংশ্লেষ ছাড়া করা যায় সেটি নারীর আর যেটিতে অর্থ সংশ্লেষ এসে যায় সেটি পুরুষের। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সর্বত্র নারীর অংশ গ্রহণ প্রতিষ্ঠিত হয়নি জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী নারী, আমাদের স্পিকার নারী, সংসদ নেতা-উপনেতা নারী, বিরোধী দলীয় নেতা সবাই নারী। কিন্তু তারপরও সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর্যায়ে সব জায়গায় নারীর অংশ গ্রহণ অনেক কম। এখনও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় তো বিশাল মন্ত্রণালয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হয়তো আমি আছি কিন্তু মাঠ পর্যায়ে বেশিরভাগ হচ্ছে নারী। শিক্ষক হচ্ছে নারী। স্বাস্থ্যের সব মাঠকর্মী নারী। কিন্তু সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় আসলে কতজন নারী? বঙ্গবন্ধু কন্যা এই জায়গাটাকে বদলে ফেলার জন্য কাজ করছেন। আমরা যখন কোনো নিয়োগের জন্য পাঠাই সেখানে যদি নারীর নাম না থাকে তিনি কিছুটা বিরক্তবোধ করেন। ১৯৯৭ সালের নারী উন্নয়ন নীতিমালা যুগান্তকারী উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, নীতিমালায় প্রজননের অধিকার, সম্পত্তিতে সমঅধিকার, চাকরিসহ সবক্ষেত্রে অংশগ্রহণ ছিল। ২০০৫ সালে রাতের অন্ধকারে সেই নারী নীতিকে একেবারে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ধ্বংস করে দেওয়া হলো। কারণ তখন যে সরকার তার একটা অংশ মৌলবাদীরা, যারা নারী বিদ্বেষী এবং সেটির যথেষ্ট প্রমাণও আছে। এই নারী নীতিকে পাল্টে ফেলার পর আবারও ২০১১ সালে নারী নীতি করলাম তখন একেবারে মৌলিক পরিবর্তনের জায়গায় এনেছিলাম। ‘সঠিক রাজনীতি না হলে আমরা পিছিয়ে আছি, পিছিয়ে থাকবো। এ পেছানোটা অনেক বাড়বে। আর যদি সঠিক রাজনীতি হয় তাহলে আরও বেশি এগোতে পারবো। আর সে সঠিক রাজনীতি অসম্প্রদায়িদক ও গণতান্ত্রিক চর্চা। ’শিক্ষামন্ত্রী বলেন, একটা কন্যা শিশু জন্মের পর থেকে এত বেশি ‘না; সহ্য করতে হয়। এটা কর না, ওটা কর না। এত না না শুনতে বড় হতে হতে তার শক্ত দেয়াল তৈরি হয়। সেই দেয়াল ভেঙে দেওয়াটাই তো বড় যুদ্ধ। সে দেয়াল ভাঙার জন্য তাকে প্ররোচিত করতে হবে এবং সাহস যোগাতে হবে। তাকে বোঝাতে হবে তার অন্তর্নিহিত শক্তি যেন সে বুঝতে পারে যে সে পারে না এমন কিছু নেই। আমরা বলি নারীরা পারে না এমন কাজ নেই। কারণ সব চাইতে কঠিন কাজটা, বোঝাটা তো তাকেই দেওয়া হচ্ছে। এখন ঘরের কাজ এবং বাইরের কাজ সবই নারী পারে। আমাদের মূল সমস্যা পুরুষতান্ত্রিকতা। নারীও সমস্যা নয়, পুরুষও সমস্যা নয়। একে অপরের পরিপূরক। আমরা একসঙ্গে কাজ করবো সেটি হবার কথা। পুরুষতান্ত্রিকতা নারীরাও আক্রান্ত।