✍️ জহিরুল ইসলাম রাসেল : আজ আষাঢ়ের প্রথম দিন। শুষ্ক মাটির বুকে বৃষ্টির স্পর্শ নাইবা লাগুক, কদম ফুলের রূপে মুগ্ধ আর স্নিগ্ধ ঘ্রাণেই না হয় বরণ করবো বর্ষাকাল। বর্ষাকালের সাথে যেন কদম ফুলের এক অনন্ত অভিসার। বৃষ্টিস্নাত কদম ফুলের রূপে মুগ্ধ সবাই, বর্ষার বন্দনায় কদম ফুল স্থান পেয়েছে আমাদের কবিতায় গানে ও শিল্প সাহিত্যে। “বাদল-দিনের প্রথম কদম ফুল করেছ দান/ আমি দিতে এসেছি শ্রাবণের গান” রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানের এ চরণ বর্ষা আহ্বানের এক অসাধারণ ব্যঞ্জনায় পরিণত হয়েছে। মানব মনের ভাবের আদান প্রদানে বর্ষা আর কদম ফুলের এক মহামিলন ঘটে অজস্র শুভেচ্ছায়। প্রকৃতির এক মূল্যবান বন্ধু এই কদমের আদি বাসস্থান দক্ষিণ- পূর্ব এশিয়ায় হলেও বাংলাদেশে সব অঞ্চলেই দেখা মেলে। এই কদম ফুলের রূপ ও ঘ্রাণের খ্যাতির সীমাবদ্ধতা ছাড়িয়ে রয়েছে হরেকরকম গুনাগুন। কদম গাছের কাঠ দিয়ে তৈরি হয় দিয়াশলাই, তাই ম্যাচ ফ্যাক্টরীতে কদম গাছের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। ভেষজ ঔষধিগুণে ভরপুর কদম গাছ। বিবিধ রোগ প্রতিরোধেও কার্যকর। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাচীনকাল থেকেই ঘরোয়া উপায়ে কদম গাছের ব্যবহার হয়ে আসছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক, ১. মুখের দূর্গন্ধ সরাতে: মুখের দুর্গন্ধ সরাতে কদম ফুল কুঁচিয়ে পানিতে সেদ্ধ করে সেই পানি দিয়ে কুলকুচা করতে হবে। এতে দুর্গন্ধ দূর হবে। ২. শিশুদের কৃমির উপদ্রবে: সাধারণত ৪-৫ বছরের শিশুদের ক্ষেত্রে ২০০ মি.লি. কচি কদম পাতার রস দিনে একবার খাওয়াতে হবে। উপদ্রব না কমলে সকালে-বিকালে দু’বার করে খাওয়ালে সপ্তাহখানেকের মধ্যে উপকার পাওয়া যাবে। বয়স অনুপাতে পাতার রসের পরিমাণ বাড়াতে হবে। ৩. টিউমারের ব্যাথা উপশমে :কদমের কচি ছাল চন্দনের মতো বেটে সাধ্যমতো গরম করে টিউমার প্রলেপ দিলে ফোলা ও ব্যথা দুয়েরই উপশম হয় বলে আয়ুর্বেদ চিকিৎসকগণ দাবি করেন। ৪. চক্ষু প্রদাহ উপশমে: কদম ছালের গুঁড়া, অফিম ও ফিটকিরি সমপরিমাণ মিশিয়ে চোখের চারদিকে প্রলেপ দিলে চক্ষু প্রদাহ দূর হয় । ৫. পিপাসা দূরীকরনে: প্রবল জ্বরে পিপাসাও প্রবল হয়ে থাকে। এমন অবস্থায় কদম ফলের রস খাওয়ালে পিপাসা দূর হয়। ৬. মুখের ক্ষত কমাতে : মুখে ঘা বা ক্ষত হলে কদম পাতার ক্বাথ মুখে নিয়ে কুলি করলে সেরে যাবে। পচা ঘা বা ক্ষত ট্যানিনের সংস্পর্শে এলে ক্ষত কোষ অধঃক্ষেপিত হয়ে পাতলা আবরণের সৃষ্টি করে ও ক্ষত সারিয়ে তোলে। ৭. ম্যালেরিয়া চিকিৎসায়: কদমে কুেইনোভিক এসিড(quinovic acid)এবং সিনকোট্যানিক এসিড (cinchotannic acid) থাকার জন্য এটি ম্যালেরিয়া চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। ৮. শিশুর বমি কমাতে:কদমের ত্বকের রস জরাচূর্ন ওচিনির সাথে মিশিয়ে খেলে বমি নিবারিত হয়। ৯.শক্তি বৃদ্ধি: কদম ছালের রস জ্বর নাশক ও বল বৃদ্ধিকারক।
পরিবেশ বিপর্যয়ের এই লগ্নে মেঘের মিতালীতে বর্ষার দূত কদম ফুল টিকে থাকুক, শহরে কিংবা গ্রামে।
# লেখক : সাংবাদিক।