ঢাকা অফিস: জনসমর্থনের প্রতি তোয়াক্কা না করা বিএনপির জন্মগত মৌলিক বৈশিষ্ট্য বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক। তিনি বলেন, ‘ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ সুষ্ঠুভাবে চলছে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে প্রথমবারের মতো শতভাগ ইভিএমের মাধ্যমে ভোট চলছে। কিন্তু সকাল থেকেই বিএনপির প্রার্থীরা এজেন্ট বের করে দেওয়াসহ নানা অমূলক অভিযোগ করে যাচ্ছে। ভোটারদের মন জয় না করে, নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি না নিয়ে তারা অবান্তর অভিযোগ করে যাচ্ছে। ইভিএমে কারচুপির সুযোগ নেই। তাই ভোট কারচুপি করতে পারবে না জেনে তারা বায়বীয় অভিযোগ করছে।’ শনিবার ( ১ ফেব্রুয়ারি) ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সিটি নির্বাচনের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপির অভিযোগ প্রসঙ্গে নানক বলেন, ‘বিএনপির এজেন্ট বের করে দেওয়া হয়েছে বলে যে অভিযোগ করা হয়েছে- এটা তাদের পুরনো রেকর্ড। আপনারা (সাংবাদিক) লক্ষ্য করেছেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন চিরাচরিত মিথ্যাচার দিয়ে দিন শুরু করেছেন। তিনি নিজে শহীদ শাজাহান প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট প্রদান করেছেন। সেই কেন্দ্রে তিনি যখন ভোট দেন, তখন তাদের পোলিং এজেন্ট ছিল না। অথচ তারা বায়বীয় কায়দায় মিথ্যাচার করছে যে, বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে তাদের পোলিং এজেন্ট বের করে দেওয়া হয়েছে।’ জাহাঙ্গীর কবির নানক আরও বলেন, ‘‘ভোট শুরু হওয়ার আগেই ইশরাক বলেছিলেন, ‘আহত বা নিহত যা-ই হই, ভোটকেন্দ্র ত্যাগ করবো না।’ অথচ নিজের কেন্দ্রে পেলিং এজেন্টের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে পারেন নাই। সেখানে আগে থেকেই আহত বা নিহত হওয়ার কথা বলে মাঠ গরম করার মধ্য দিয়ে নির্বাচন বানচাল করার দুরভিসন্ধিমূলক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তারা মরিয়া হয়ে উঠেছে।’’ নানক বলেন, ‘ভোটাধিকার জনগণের সাংবিধানিক অধিকার। ভোটাররা শান্তিপূর্ণ ও স্বাধীনভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করুক, এটাই আমাদের প্রত্যাশা। বিগত দিনগুলাতে আমরা দেখেছি, জনগণের ভোটাধিকার নিয়ে বিএনপি-জামায়াত চক্র ছিনিমিনি খেলেছে। বিএনপি আমলে নির্বাচন স্টাইল ছিল- ১০টি হোন্ডা, ২০টি গুণ্ডা, নির্বাচন ঠাণ্ডা। যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, জনগণের ক্ষমতায়নে বিশ্বাস করে না, তারা প্রযুক্তির বিপক্ষে কথা বলে। কারণ, প্রযুক্তির বিকাশের মধ্যেই স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও জনগণের ক্ষমতায়নের পথ সুগম হয়।’ কিন্তু এটা বিএনপি চায় না বলে অভিযোগ করেন তিনি। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর অন্যতম এ সদস্য বলেন, ‘‘কেন্দ্র দখল করে, সিল পিটিয়ে একজনের ভোট আরেকজনের দেওয়ার সুযোগ ইভিএম পদ্ধতিতে নেই। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমার ভোট আমি দেবো, যাকে পছন্দ তাকে দেবো।’ এই নিয়মে ভোট চলছে এবং সেভাবে ভোট হবে। তিনি আরও বলেন, ‘আজ সবাই ভোট দিতে পারছে, সেই পরিবেশ আমরাই সৃষ্টি করেছি। ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখবে।’’ কূটনীতিকদের সিটি নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নিয়ে সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য নির্বাচন কমিশন দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক নিয়োগ দিয়েছে। কূটনৈতিক মিশনগুলো থেকে বিদেশি পর্যবেক্ষকের পাশাপাশি দেশি পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে পর্যবেক্ষক নিয়োগে আন্তর্জাতিক বিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হয়েছে। বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরিরত বাংলাদেশিদের বিদেশি পর্যবেক্ষক হিসেবে মনোনীত করে কূটনৈতিক মিশনগুলো সঠিক করেনি।’ নানক বলেন, ‘আওয়ামী লীগ জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় আছে, জনগণের ভোটাধিকার ক্ষুণ্ন হয় এমন কোনও কাজ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা করা থেকে শুধু বিরত থাকবেই না, এমন কাজকে প্রতিহত করবে। আমরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানাই, যে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা রোধ করার জন্য তারা যেন কঠোর অবস্থান গ্রহণ করে।’ ঢাকাবাসীর প্রতি কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘আপনারা নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট প্রদান করুন। আমরা বিশ্বাস করি, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ভোটাররা উন্নয়ন, সমৃদ্ধি ও সম্ভাবনার পক্ষে এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করবে।’ সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি, ড. হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, এস এম কামাল, সাখাওয়াত হোসেন শফিক, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, নির্বাহী সদস্য অ্যাডভোকেট এ বি এম রিয়াজুল কবির কাওছার প্রমুখ।
জনসমর্থনের প্রতি তোয়াক্কা না করা বিএনপির জন্মগত মৌলিক বৈশিষ্ট্য: নানক
0
Share.